IPL Business Model

ক্রিকেট খেলার এর জন্ম কীভাবে হয়?

বিসিসিআই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড। বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ক্রিকেট সংস্থা অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড এর মার্কেট ভ্যালু ৩৫০০ কোটি টাকা, আর ভারতের ক্রিকেট বোর্ড এর মার্কেট ভ্যালু ১৪০০০ কোটি টাকার বেশি। ক্রিকেট ভারতে অনেক জনপ্রিয় হলেও ক্রিকেট এর জন্ম ভারতে হয়নি, যেখানে ক্রিকেট এর জন্ম সেই দেশে আজ ক্রিকেট জনপ্রিয় নয়। আমাদের দেশে ভারতে ক্রিকেট কোনো খেলা নয়, টাকা ছাপানোর মেশিন হয়ে গেছে। ২০২১ সালে বিসিসিআই ৩৯০০ কোটি টাকা আয় করেছিল। যে ক্রিকেট বোর্ডকে ১০ বছর আগে কেউ জানতো না, আজ সেই ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড। বিসিসিআই এর সবচেয়ে বেশি আয় হয় আইপিএল থেকে। আইপিএল টিমের মালিক প্রতি বছর প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচ করে টিমের ওপর। আইপিএলে যে টিম জিতে যায় সেই টিমকে ২০ কোটি টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে ২০ কোটি টাকার জন্য কেউ কেন ২০০ কোটি টাকা খরচ করবেন? ৪০০ বছরের পুরনো খেলা ক্রিকেট আজ ১০৪ এর‌ বেশি দেশে খেলা হয়। ক্রিকেট এর জন্ম ১৬১১ সালে ইংল্যান্ডে হয়েছিল। সেই সময় ক্রিকেট সাধারণ ভাবে খেলা হত। ১৭০৯ সাল থেকে ক্রিকেটকে পেশাদার খেলা হিসাবে মানা হয়। ১৮০০ দশকের পর ক্রিকেট ইংল্যান্ডে জনপ্রিয় হয়। সেই সময় ব্রিটিশরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ দখল করে, যে সব দেশ ব্রিটিশরা দখল করে সেই সমস্ত দেশে ক্রিকেট জনপ্রিয় হতে থাকে। সেই সমস্ত দেশের মধ্যে ভারত‌ও ছিল। আজ পৃথিবীতে সবচেয়ে দামী ক্রিকেট লীগ হচ্ছে আইপিএল।

আইপিএল বা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ এর শুরু কীভাবে হয়?

বিশ্বে ক্রিকেট তিন ভাবে খেলা হয়-
১. টেস্ট ম্যাচ - পাঁচ দিন ধরে খেলা হয়।
২. ওয়ানডে - ৫০ ওভারের একদিন খেলা হয়।
৩. টি টোয়েন্টি - ২০ ওভারের খেলা হয়।
২০০৭ সালে ভারত টি টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপ জিতেছিল। টি টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপ জেতার পর ভারতে টি টোয়েন্টির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। সেই সময়ের বিসিসিআই ভাইস প্রেসিডেন্ট ‌ললিত মোদী , কোনোরকম ভাবে আইপিএল এর জন্য বিসিসিআই মেম্বারকে রাজি করান। দর্শকদের ক্রিকেট খেলা দেখার জন্য সারাদিন টিভির সামনে বসে থাকতে হত না, আর খেলোয়াড়রা তাদের প্রতিভা দেখানোর জন্য আরও একটি জায়গা পান। আইপিএলে কিছু মানুষের টাকার বৃষ্টি হয়। ২০১৮ এর আগে টিমের মালিক বাদে যারা আইপিএল এর সাথে যুক্ত ছিল সবাই টাকা আয় করেছে, টিম এর মালিকের ক্ষতি হয়েছে।

আইপিএল টিম কিভাবে তৈরি করা হয়?

আইপিএলে টিম তৈরি করার জন্য বিসিসিআই আইটিটি বা ইনভেটশন টু টেন্ডার খুলে দেয়। ইচ্ছুক ব্যক্তি আবেদন করতে পারেন। আইপিএল টিম তারাই কিনতে পারবে যাদের আয় ৩০০০ কোটি টাকার বেশি। এইজন্য দেখা যায় যারা টিম কিনেছে তারা পার্টনারশিপ করে কিনেছেন। বিসিসিআই টিমের মূল্য নূন্যতম ১৭০০-১৯০০ কোটি টাকা রাখে। টিম তৈরি হবার পর আইপিএলে যে সমস্ত খেলোয়াড় খেলবে তাদের প্রত্যেককে আইপিএলের সাথে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। আইপিএলে তিন ধরনের খেলোয়াড় খেলে-
১. ক্যাপ প্লেয়ার - যারা ভারতের হয়ে খেলে বা খেলেছে।
২. আন্তর্জাতিক প্লেয়ার ।
৩. আনক্যাপ প্লেয়ার - যে সমস্ত খেলোয়াড় জেলা থেকে খেলতে আসে, যারা ভারতের হয়ে খেলেনি।
এরপর প্রত্যেক টিমকে ৯০ কোটি টাকার লিমিট সেট করে দেওয়া হয়, টিম ৯০ কোটি টাকার বেশি খরচ করতে পারবে না।

আইপিএল থেকে কীভাবে আয় হয়?

১) ২০০৮ - ২০১৭ পর্যন্ত সোনি কোম্পানির কাছে রাইটস ছিল। এরজন্য সোনি কোম্পানি ৮২০০ কোটি টাকা দিয়েছিল। এরপর স্টার ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৬৮৪৭ কোটি টাকায় রাইটস কেনে। আইপিএল বিশ্বের অন্যান্য দেশের লোক‌ও দেখে। এইজন্য আন্তর্জাতিক মিডিয়া কোম্পানিকেও রাইটস বিক্রি করা হয়। ২০১৭ সালে ফক্স স্টুডিয়ো ২.৫৫ বিলিয়ন ডলারে কিনে।
২) ২০০৮ - ২০১২ পর্যন্ত ডিএল‌এফ টাইটেল স্পন্সর কিনেছিল ২০০ কোটি টাকা দিয়ে। এরপর ২০১৭ পর্যন্ত পেপসি টাইটেল স্পন্সর কিনেছিল। ২০১৮ - ২০২২ পর্যন্ত ভিভো ২২০০ কোটি টাকায় টাইটেল স্পন্সর কিনে নেয়। ২০২০ সালে গাল‌ওয়ান ভ্যালির পর ভারত এবং চিনের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়, সেজন্য ভিভো‌ টাইটেল স্পন্সর থেকে সরে যায়। এরপর ড্রিম ইলেভেন কে ২০০ কোটি টাকায় টাইটেল স্পন্সর বিক্রি করে দেওয়া হয়। এরপর টাটা বছরে ৩০০ কোটি টাকায় টাইটেল স্পন্সর কিনে নেয়।
৩) ব্রডকাস্টার এক ম্যাচে এক অ্যাড স্লটের জন্য ১০ - ১৫ লাখ চার্জ করে কোম্পানির কাছে। ব্রডকাস্টার প্রত্যেক ম্যাচে ২৩০ অ্যাড দেখায়। প্রত্যেক ম্যাচ থেকে ব্রডকাস্টার ২৩ - ২৫ কোটি টাকা আয় করে। স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম অ্যাডস এবং মেম্বারশিপ এর মাধ্যমে টাকা আয় করে।
৪)  জার্সিতে বিভিন্ন কোম্পানির অ্যাড ছাপানো হয়। সেই জার্সি পরে খেলোয়াড়রা খেলে। সেই অ্যাডের থেকে আয়ের কিছু অংশ খেলোয়াড় রাও পায়।
৫) স্টেডিয়ামের মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানির অ্যাড দেওয়া হয়।
৬) এছাড়া মার্চেনডাইজ এর মাধ্যমেও টিমের আয় হয়। টিমের মগ, জার্সি, কাপ, টুপি ইত্যাদি বিক্রি করা হয়।
৭) টিকিট বিক্রি করে ৮০% টিমের মালিক ও ২০% স্টেডিয়ামের মধ্যে ভাগ করা হয়।

Post a Comment

أحدث أقدم