AEPS কি?
AEPS (Aadhaar Enabled Payment System) হল একটি পেমেন্ট সিস্টেম। এর মাধ্যমে আধার নম্বর এবং বায়োমেট্রিক ব্যবহার করে ব্যাঙ্কিং লেনদেন করা হয়। ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (NPCI) এই পেমেন্ট সিস্টেমটি চালু করেছে আধার কার্ডের মাধ্যমে টাকা তোলা, টাকা জমা,ব্যালেন্স চেক এবং মিনি স্টেটমেন্ট করার জন্য ৷
AEPS-এর সুবিধা হচ্ছে লেনদেন করার জন্য ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের প্রয়োজন হয় না। গ্রাহকের আধার নম্বর দিয়ে বায়োমেট্রিক স্ক্যান (আঙুলের ছাপ বা আইরিস স্ক্যান) করে পরিষেবা দেওয়া হয়।
কিভাবে AEPS কাজ করে?
গ্রাহককে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সাথে আধার নম্বর লিঙ্ক করতে হবে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক ব্যাঙ্কে করা হয়। আধারের সাথে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক হয়ে গেলে AEPS পরিষেবা ব্যবহার করা যাবে।
ব্যাঙ্ক বিসি বা কিয়স্ক এর কাছে আধার নম্বর দিয়ে আঙুলের ছাপ বা চোখের রেটিনা স্ক্যান করে ব্যালেন্স চেক, মিনি স্টেটমেন্ট, টাকা উইথড্রল ও জমা করা হয়।
কিভাবে AEPS এর মাধ্যমে টাকা ইনকাম করবেন?
কিভাবে ব্যাঙ্কিং এজেন্ট হবেন?
AEPS এর মাধ্যমে টাকা রোজগার করার জন্য প্রথমে বিজনেস করেসপন্ডেন্ট বা বিসি এজেন্ট হতে হবে।
প্রথমতঃ সরাসরি ব্যাঙ্কের থেকে বিসি এজেন্ট নেওয়ার জন্য আপনার এলাকার ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করতে হবে। ব্যাঙ্কের ম্যানেজার এর সাথে যদি ভালো পরিচয় থাকে তবে সহজেই বিসি এজেন্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ব্যাঙ্ক সবাইকে সরাসরি বিসি এজেন্ট করাতে চায় না। ব্যাঙ্ক থেকে বিসি এজেন্ট হতে পারলে কাজ করে যা কমিশন পাবেন সব আপনার অন্য কাউকে দিতে হবে না। যে ব্যাঙ্কের বিসি এজেন্ট হবেন শুধুমাত্র সেই ব্যাঙ্কের কাজ করতে পারবেন।
দ্বিতীয়তঃ বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমেও বিসি এজেন্ট হতে পারবেন। এজেন্সির মাধ্যমে বিসি এজেন্ট হওয়ার জন্য কিছু টাকা দিতে হবে। আলাদা আলাদা এজেন্সি আলাদা টাকা নেয়। এজেন্সির মাধ্যমে বিসি এজেন্ট হলে কাজ করে যা কমিশন পাবেন তার থেকে কিছু পরিমাণ এজেন্সি নিবে। বাজারে অনেক ফ্রড এজেন্সি আছে তাই তথ্য যাচাই করে টাকা দিবেন। যে ব্যাঙ্ক থেকে বিসি এজেন্ট নিবেন শুধুমাত্র সেই ব্যাঙ্কের কাজ করতে পারবেন।
তৃতীয়তঃ আবার প্রাইভেট কোম্পানীর থেকে বিসি এজেন্ট হতে পারবেন। প্রাইভেট কোম্পানীর বিসি আইডি নিয়ে শুধুমাত্র টাকা দেখা, মিনি স্টেটমেন্ট চেক, টাকা জমা ও টাকা তুলতে পারবেন। ব্যাঙ্কের অন্যান্য কাজ করতে পারবেন না। কোম্পানির থেকে আইডি নিলে সুবিধা হচ্ছে সব ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলা, টাকা চেক, টাকা জমা ও মিনি স্টেটমেন্ট করতে পারবেন। আর মোবাইল থেকেও অ্যাপের মাধ্যমে কাজ করতে পারবেন। এর সাথে বিল পেমেন্ট, রিচার্জ ইত্যাদি কাজ করতে পারবেন। কোম্পানি থেকে আইডি নিলে কাস্টমারের কাছে এক্সট্রা টাকা নিতে চাইলে নিতে পারেন। জনপ্রিয় প্রাইভেট কোম্পানী হচ্ছে স্পাইস মানি, পেনিয়ারবাই, রেপিপে, রয়নেট, এয়ারটেল পেমেন্ট ব্যাঙ্ক, ফিনো পেমেন্ট ব্যাঙ্ক ইত্যাদি।
AEPS এজেন্ট হওয়ার জন্য কি কি লাগবে?
১) AEPS এজেন্ট হওয়ার জন্য আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট, বিজনেস করেসপন্ডেন্ট সার্টিফিকেট ইত্যাদি লাগবে।
২) একটি রুম লাগবে ও স্থায়ী ঠিকানা হতে হবে।
৩) সরাসরি বা এজেন্সির মাধ্যমে ব্যাঙ্ক থেকে বিসি এজেন্ট আইডি নিলে কম্পিউটার অবশ্যই লাগবে।
৩) প্রাইভেট কোম্পানী থেকে আইডি নিলে কম্পিউটার বা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল থাকতে হবে।
৪) বায়োমেট্রিক ডিভাইস অবশ্যই লাগবে। আঙুলের ছাপের জন্য বায়োমেট্রিক স্ক্যানার লাগবে। এর সাথে আইরিশ স্ক্যানার লাগবে। আইরিশ স্ক্যানার না নিলেও চলবে।
৫) মিনি এটিএম ডিভাইস লাগবে। প্রাইভেট কোম্পানীর আইডির ক্ষেত্রে না নিলেও চলবে।
৬) ব্যাঙ্ক থেকে আইডি নিলে পাসবুক প্রিন্টার লাগবে।
৭) এজেন্সির মাধ্যমে ব্যাঙ্ক থেকে বিসি এজেন্ট আইডি নেওয়ার জন্য টাকা লাগবে ১০ হাজার থেকে ১ লাখ পর্যন্ত। প্রাইভেট কোম্পানীর আইডি নেওয়ার জন্য ০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত লাগে।
৮) ইলেক্ট্রিসিটি থাকতে হবে।
৯) ইন্টারনেট সুবিধা থাকতে হবে।
কিভাবে কত কমিশন পাবেন?
১) গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুললে ও গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় টাকা জমা করলে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমিশন পাওয়া যায়।
২) গ্রাহক AEPS এর মাধ্যমে টাকা তুললে ২০ টাকা পর্যন্ত কমিশন পাবেন।
৩) গ্রাহক মিনি স্টেটমেন্ট করলে ১ থেকে ২ টাকা পর্যন্ত কমিশন পাবেন।
৪) গ্রাহক ফিক্সড ডিপোজিট ও রেকারিং ডিপোজিট করলে কমিশন পাবেন।
৫) গ্রাহকের বিমা করলে কমিশন পাবেন।
৬) মাইক্রো এটিএমের মাধ্যমে গ্রাহক টাকা তুললে কমিশন পাবেন।
৭) গ্রাহকের পাসবই আপডেট করলে কমিশন পাবেন।
৮) এছাড়া গ্রাহক আপনার মাধ্যমে লোন নিলে কমিশন পাবেন।
৯) গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা থাকলে কমিশন পাবেন।
১০) গ্রাহকের সংখ্যা যত বেশি হবে ততই বেশি কমিশন পাবেন।
১১) আবার যারা প্রাইভেট কোম্পানীর আইডি ব্যবহার করে তাদের মধ্যে অনেকে গ্রাহকের কাছে অতিরিক্ত কমিশন নেয়।
১২) প্রাইভেট কোম্পানীর আইডি নিলে রিচার্জ, বিল পেমেন্ট, লোন রিপেমেন্ট, ক্যাস কালেকশন ইত্যাদি সুবিধার মাধ্যমে অতিরিক্ত কমিশন পাবেন।
১৩) গ্রাহক টাকা জমা ও ট্রান্সফার করলে কমিশন পাবেন।
AEPS এর সুবিধা ও অসুবিধা কি কি?
১) যে কোনো কাজ দ্রুত করা যায়।
২) সরাসরি বা এজেন্সির মাধ্যমে ব্যাঙ্ক থেকে বিসি এজেন্ট আইডি নিলে যে ব্যাঙ্ক থেকে বিসি আইডি নিয়েছেন শুধুমাত্র ওই ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের সুবিধা দিতে পারবেন ও অতিরিক্ত চার্জ নিতে পারবেন না।
৩) সরাসরি বা এজেন্সির মাধ্যমে ব্যাঙ্ক বিসি আইডি নিলে ব্যাঙ্কের সময় মতো কাজ করতে হবে।
৩) প্রাইভেট কোম্পানীর আইডি নিলে অতিরিক্ত চার্জ নিতেও পারেন ও যখন খুশি কাজ করতে পারবেন।
৪) প্রাইভেট কোম্পানীর আইডি নিলে সমস্ত ব্যাঙ্ক থেকে টাকা চেক, মিনি স্টেটমেন্ট ও টাকা তুলতে পারবেন।
৫) প্রাইভেট কোম্পানীর আইডি নিলে সাথে অন্যান্য কাজও করতে পারবেন।
৬) ব্যাঙ্ক থেকে আইডি নিলে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। প্রাইভেট কোম্পানীর আইডি নিলে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন না।
৭) এই AEPS বিজনেস গ্রামাঞ্চলে খুলতে হবে কেননা শহরে খুললে বেশি লাভ হবে না।
৮) ব্যাঙ্ক থেকে আইডি নিয়ে কাজ করলে কমিশন পরের মাসে একসাথে পাবেন। প্রাইভেট কোম্পানীর আইডি নিয়ে কাজ করলে সঙ্গে সঙ্গে কমিশন পাবেন।
৯) গ্রাহক সংখ্যা বাড়াতে না পারলে কমিশন কম পাবেন।
১০) ব্যাঙ্ক থেকে বিসি আইডি নিলে ব্যাঙ্ক ও এজেন্সি প্রতি মাসে টার্গেট দেয় অ্যাকাউন্ট খোলা ও বীমা করার জন্য। প্রাইভেট কোম্পানীর আইডি নিয়ে কাজ করলে কোনো টার্গেট দেওয়া হয় না।
১১) ব্যাঙ্ক থেকে বিসি এজেন্ট আইডি নিলে কমিশন বেশি পাবেন। প্রাইভেট কোম্পানীর আইডি নিয়ে কাজ করলে কমিশন কম পাবেন।
১২) আপনি কত টাকা রোজগার করতে পারবেন সেটা নির্ভর করে আপনার কাজের ধরন, গ্রাহক সংখ্যা, এলাকা ইত্যাদির ওপর।
১৩) আপনি প্রতি মাসে ১০০ টাকা থেকে ৪০০০০ টাকা পর্যন্ত রোজগার করতে পারবেন।
১৪) লেনদেনের জন্য মিনিমাম ১ লাখ টাকা দিয়ে শুরু করতে পারেন। মিনিমাম ৫ লাখ টাকা থাকলে পরিষেবা দিতে সুবিধা হয়।
১৫) ব্যাঙ্ক বিসি এজেন্ট আইডি মাধ্যমে একদিনে ২০০০০ টাকা পর্যন্ত ও প্রাইভেট আইডি মাধ্যমে ১০০০০ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়।
إرسال تعليق